পৃষ্ঠাসমূহ


পুরনো হয়ে গেছে এই শহর



















পুরনো হয়ে গেছে এই শহরের শরীর
বার্ধক্যে জরাজীর্ণ এর সকল প্রাণ
চোখে চালশে ধরা
ভাল কিছু চোখে পরে না
ওষ্ঠে ষাট বছরের বৃদ্ধের 
শেষ বার জ্বলে ওঠা কামনার লালা
শিরা উপশিরা গুলো দৃশ্যমান 
কোটি কোটি ক্যান্সার আক্রান্ত রক্ত কণিকা
পাকস্থলী ভরা বুদবুদ গ্যাস
পয়ঃনিষ্কাশনের যাচ্ছে তাই অবস্থা
ভেঙ্গে গুড়িয়ে চলছে থাই গ্লাস সিরামিক ইটের চাষবাস
নিয়ন হারিয়ে গেছে এখন এনার্জি সেভিং এর টাইম
আমরাও সংরক্ষণ করে চলেছি
বন্ধুত্ব প্রেম ভালবাসা সততা
-সহমর্মিতা মনুষ্যত্ব 
এ সবই সংরক্ষিত জাদুঘরে তোলা
দিন দিন এই বৃদ্ধ শহরের বুকের লোম
সাদা হয়ে ,হয়ে যায় বিবর্ণ ধূসর
রোজ রোজ চলে হেয়ার রিপ্লেশমেন্ট লেজার সার্জারি
শহরের সবই চলে ধুকেধুকে 
এক পা দু পা করে
শহরে বদলে নিচ্ছে রূপ পুনর জনমে
শুধু বন্ধ মানুষ তৈরির কারখানা

শূন্যতায় ফিরে যাচ্ছি তোমার ছায়ার হাত ধরে



ডক্টর,

সব মানুষেরই এমন একজন থাকা দরকার যাকে কারনে অকারনে বিরক্ত করা যায়। সময় অসময়ে ডেকে এনে বলা যায়-'শোন আমার ভীষন মন খারাপ। তুমি আমার সাথে একটু আজাইরা প্যাচাল পারবা? তারপরও যদি মন ভাল না হয় তাইলে হুদাই ঝগড়া কইরা আমার মন ডাইভার্ট করে দিবা। পারবা না?' আমি মুখচোরা স্বভাবের মানুষ। সহজে কারো কাছে আমার খোলস খোলে না। আমি হইলাম শামুকমানব। আমার বন্ধুমহল দিন দিন যত সংখ্যায় বাড়ে অনুপাতে খোলস খোলার মানুষের সংখ্যা তত কমে। তুমি কেমনে জানি খোলস খুলে ফেলছ। এখন আমার ইচ্ছা করে কারনে অকারনে তোমাকে বিরক্ত করতে। ইচ্ছা করে কান ধরে বলি-'এই তুই এখন ব্যস্ত কেন? ব্যস্ত থাকতে পারবি না। আমার সাথে গল্প কর।' কিন্তু আমিতো ভাল গল্প করতে পারি না। একটু একটু কবিতা লিখতে পারি। আচ্ছা গল্প শেষ হয়ে গেলে লুডু খেলা যায়। নইলে বালিশ ফাইট। নইলে চুপ করে বসে থাকি? ডক্টর শূন্য থেকে উঠে আসা যতটা কষ্টের শূন্যতায় ফিরে যেতে আরও বেশী কষ্ট হয়। কারন ফিরে যেতে হয় একা। আজকে একজন চলে গেল। বলে গেল দাদা ভাল থাকিস। আমার মধ্যে অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে কেউ বেশী ভালবাসলে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কি করব বুঝতে পারি না। বেশী তৃষ্ণায় পানি যেমন গলায় আটকে যায় এমন একটা ব্যাপার। ডক্টর অসুস্থ হলে চলবে কেন? মোটেই চলবে না। রোগী দু'চারটে মরে তো মরুক। ডক্টর আমি ভাল আছি। আমি একা নই। শূন্যতায় ফিরে যাচ্ছি তোমার ছায়ার হাত ধরে। ভাল থেক তুমি।

-রুদ্র বাবু

পূর্ণতার অপেক্ষা













সারাদিনের ক্লান্তি অবসাদ
এক জীবনের অপূর্ণতা প্রার্থনা
আকাঙ্খা ব্যর্থতা অনুশোচনা
না বলা কথা, নাম ঠিকানা বিহীন চিঠি
অনেক অনেক গল্প 
রচিত এক খন্ড আকাশ
ভেসে যাওয়া মেঘের অভিমান অভিলাষ 
মনের দেয়ালে দেয়ালে আঁকিবুঁকি কাটাকাটি
এক মাথা এলোমেলো চুল
নিয়ে পাখিটি ঘুমিয়ে গেল 
শিয়রে বসে রইল 
আধখানা স্বপ্ন -পূর্ণতার অপেক্ষায়

বকুলফুল













বকুলফুল তুলে রাখ
নীল খামের ভাজে
তুমি ভাল থাক বকুল ফুল
মুমূর্ষ হয়ে বেঁচে থাকা
সার্কাসের দড়ি বেয়ে হাটা
কিছু মুহূর্তের প্রলোভন
দ্বিধা হাতছানি অহেতুক শর্তারোপ
আকাঙ্ক্ষা সুখে থাকা
কাঁচফুল ঘাসফড়িং আবোলতাবোল অযথা
বকুলফুল বৃষ্টিতে ভিজে যদি যায়?
কি দরকার অহেতুক
শূন্য যোগ শূন্য
বৃষ্টিতেই ভিজবো ভীষণ
বকুলফুল তুলে রাখ
নীল খামের ভাজে
তুমি ভাল থাক বকুল ফুল
দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেল
আমার নাহয় নাইবা হল
ঝুমঝুম ছাতি মাথা আলিঙ্গনের বৃষ্টি ভেজা
চোরা কাটা ভেসে ভেসে
আটকে যেতেই পারে
ঝেড়ে ফেলেছ মন্দ নয়
নয়তো চুপসে শরীরে জড়িয়ে যেত
আগামী বরষায়
বকুলফুল বৃষ্টিতে ভিজে যদি যায়?

হ্যালুসিনেশন




ছিটে আসা ছিট ছিট কাদা

না, একটা দীর্ঘ শান্তির ঘুম না

পদ্ম পাতার জল ক্ষনস্হায়ী

গড়িয়ে পরে কতটুকু ভেজায় মাটি?

ভেজায় না? শান্তি নেই সে জলে?

সত্যজিৎ ভদকা সত্যজিৎ

তিলোত্তমা নিরাপদ আশ্রয়

রাজবাড়ী রাজরানী

আর্য অনার্য যারই সন্তান 

সৃষ্টির ভাঙ্গা গড়া ধ্বংস প্রলয়

মাথায় এক দূর্বোধ্য হ্যালুসিনেশন

ঘুম ঘুম ঘুনে পোকা

কতদূর জল জল অথৈ জল?

ডাকবাক্সে তোমার ঠিকানা বিহীন চিঠি

কবিটাকে খোজে

কবি মানুষ হতে চেয়ে

হয়ে ওঠে রোজকার পুরনো মাতাল

ছিটে আসা ছিট ছিট কাদা

না, একটা দীর্ঘ শান্তির ঘুম না

রোদ্রিতা আমি ঘুমাইনি

বহুদিন বহুবছর বহুযুগ

মাথায় এক দূর্বোধ্য হ্যালুসিনেশন

ঘুম ঘুম ঘুনে পোকা

দীঘির জল




মনে হয় বক্ষে একটা ভারী পাথর বাধিয়া একটা মস্ত বড় দীঘির জলে ডুবিয়া যাই। দীঘির জল হইতে হইবে সবুজাভ আর তার চারপাশে প্রচুর নারিকেল গাছ। নারিকেল গাছের ছায়ায় সেই দীঘির জল বার মাস শীতল থাকিবে। আর সূর্যের আলো নারিকেল গাছের চিরি চিরি পাতার ফাঁক গলিয়া আসিয়া প্রতি প্রভাতে চুমিয়া যাইবে দীঘির জল। একটা মস্ত বড় বাধানো ঘাট থাকিতে হইবে। আমি দীঘির জলে ডুবিয়া যাইবার পর আশেপাশের মানুষ দীঘিতে আসিবে শুধু সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত। চারিদিকে তখন এ দীঘি হইবে এক ভূতুড়ে দীঘি। বাচ্চাদের গোসল করাইলে তাহাদের জ্বর হইবে আর কুমারী মেয়েরা জলে নামিলে তাহাদের আর সম্বন্ধ আসিবে না। কিন্তু ঐ যে মস্ত বাধানো ঘাট, প্রতি সন্ধ্যায় তুমি আসিয়া সেইখানে বসিবে। আর নিজের মনে আবোলতাবোল যা হয় বকাবকি করিবে। আমি চুপ করিয়া শুনিব আর হাসিব কিন্তু জবাব দিব না। কোন একদিন যদি ইচ্ছা হয়তো আমার মেয়েটাকেও সাথে করিয়া নিয়া আসিও। তাহার দুই বেণী করিয়া দিও আর একটা নীল ফ্রক পরাইয়া দিও। আর অবুঝ মেয়েটা আমার কথা জিজ্ঞাস করিলে বলিয়া দিও-'বাবা তোমার জন্য মুক্তা খুঁজিতে দীঘির জলে নামিয়া গেছে, খুঁজিয়া পাইলেই ফিরিয়া আসিবে।'

চিলেকোঠার আধার



চিলেকোঠার ঘুটঘুটে অন্ধকারে আটকে আছে শ্বাস
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি সিঁড়ির বুকে
অতীতে হেলান দিয়ে গুটিয়ে নেই বর্তমান
বসে বসে খেলি প্রিয়তম আধারের সাথে
ঘুলঘুলির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যায় রোদ্রিতা
কালি গোলা আধারে চোখে ধা ধা লেগে যায়
নীরব প্রশ্ন- 'ফের খেলছো তুমি আধারের সাথে?'
আমি আহত চোখ তুলে তাকাই
পড়নের শাড়ীটি গোধূলি সূর্যের সোনালী
রোদ্রিতার চোখদুটি টকটকে লাল
উত্তর প্রশ্ন হয়ে প্রতিধ্বনি তোলে
-'তুমি কেঁদেছ সেই বনভূমিতে বসে?'
ছলছল চোখে হেসে উঠে সে
ধরা পরে যাওয়া হাসি
আমি হাত বাড়িয়ে বলি-'আস, কাছে আস।'
রক্তিম সূর্যটা হারিয়ে যায় ধান শালিকের দেশে
আর চিলেকোঠা ভরে যায় ক্লান্তিকর আধারে

ব্যাকুলতা





গোধূলি লগনের এ আধার আলোয়
বোঝা যায় না তার রং
হবে যে কোন একটা
হলুদ হয়ত, হয়ত বাসন্তী শরীর
পাঁচ তালার গ্রিলে ঝুলে ঝুলে দুলে যায়
বৈশাখের পাগলা বাতাসে আকাশে উড়ে যেতে চায়
মানবীর শরীরে জড়িয়ে থেকে থেকে
এই গোধূলি লগ্নে সেও পেয়ে গেছে মানসীর মন
হয়ত মুক্তি চায় ছিঁড়তে চায় কোন বন্ধন
পায়ে যার জড়িয়ে আছে সম্পর্কের শিকল
হয়ত কোন দুঃখবোধ নয়, হাহাকার নয়, নয় বিষণ্ণতা
হয়ত শুধুই একটা মানুষের ঘরে ফিরবার ব্যাকুলতা
কি জানি ছাইপাঁশ এ সব কিছুই নয়
তাঁতির নিখুঁত কারিগরি শুধু, শুধু পাঁচ তলার গ্রিলে ঝুলে থাকা
হলুদ, বাসন্তী কিংবা যে কোন রংয়ের একটা শাড়ী
আমার শুধুই মনে হয় শাড়ী নয়
ভীষণভাবে রক্ত মাংসের কোন রমণী
গোধূলি লগনের পাগলা বৈশাখী বাতাসে
যার মনে চলছে আমার মনের ঝড়

অবচেতনে স্বপ্ন জলপরী

তোমাকে ঠিক ঠিক চিনে ফেলেছি
এ ভাবনা শেষ করে তাকিয়ে দেখি
আমার পাশে বসে আছে আজন্ম অপরিচিত এক মানবী
তুমি কে প্রশ্ন করতেই
তার ঠোঁটে ভেসে উঠে হারিয়ে যায় বিষন্ন হাসি
জল ছলছল দু'টি চোখেও হাসি
সে হাসিতে শুধুই বিষন্নতার সুর
আমি স্বপ্নঘোর ভেবে হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেখি শূন্যতা
সে তখন নেমে গেছে জলের বুকের কাছে
হাত ইশারায় বলে দিল নেম এস শীতলতায়
আমি ধীরে ধীরে নেমে যাই
তলিয়ে যাই এক গভীর ঘুমে
আর অবচেতনের গভীরে শুনতে পাই
জলডানায় উড়ে উড়ে বহুদূরে হারিয়ে যায়
মানবী কিংবা একাটা জলপরী


তুমি আমাকে মুক্তি দাও

অপেক্ষার প্রহরের প্রতিটি ক্ষনে
আমার হৃদয়ে নেমে আসে মৃত্যু
প্রতিটি কোষ হয়ে যায় নিঃস্প্রান
তুমি ফিরে এসে যাকে খুজে নাও
সে আমি নই, একটা ক্ষুদার্থ পিশাচ
যার চাহিদা আশা আকাঙ্খা বদলে
নিজেকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যায়
ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে
তুমি কেন পার না
কেন মাতৃত্বের শাসনে বলতে
... পারো না 'আর পাগলামী করনা'
কেন শক্ত করে আমার হাত ধরে টেনে
নিয়ে আস না গিরিখাদের শেষ প্রান্ত থেকে
কেন কেন কেন আমাকে বল না
'আর নিজেকে পুড়িও না শশ্মানে
এবার তোমার ঘরে চল'
ঘরোয়া অ-ঘরোয়া রাজনীতিতে পরাজিত আমাকে
তুমি কেন বলনা 'এসবে কিছু যায় আসে না
আমি আছি তোমার পাশে'
তুমি কি পারনা খুব ভীষনভাবে
একবার বুকে জড়িয়ে ধরতে
পারনা আমাকে মুক্তি দিতে
তবে কেন আমি অবিরত তোমার কাছে চাই দুটি বিহঙ্গ ডানা
তুমি আমাকে মুক্তি দাও মুক্তি দাও মুক্তি দাও
আজন্মের অভিশাপ হতে