পৃষ্ঠাসমূহ


বিদায় এ শব্দের মাঝে
লুকিয়ে আছে বারুদ
তোমার ওষ্ঠের ঘর্ষনে
আমার ভেতরে জ্বলায় আগুন
ঘুড়ি ওড়ে স্বপ্নের রঙ্গীন সুতোয়
কত ছোটাছুটি তার নীলাকাশে........

একটুও মনে পড়ে না তোমায়

তোমার কথা আমি ভাবি না মোটেই
ভীষন ব্যস্ত ভাববার সময় একদম নেই
শুধু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই
মনে হয় তুমি কি করছ
দাত মাজতে বসলেই জীভে কামর দেই
তোমার টুথপেস্ট এর প্রিয় ফ্লেভার জানা হয়নি
নাস্তার টেবিলে বসে আমি মোটেই ভাবিনা তোমায় নিয়ে
আচ্ছা তোমার পছন্দ কি অমলেট নাকি মামলেট
এই ধর সকাল দশটা
ভুল করে কেউ দুধ চা নিয়ে এলে
আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলি রোদ্রিতা কে ডাক
দুপুর বেলা তো আমি ভীষন ব্যস্ত
শুধু দু চারবার ডাকবাক্স্ উল্টে দেখি
যদি তোমার চিঠি আসে
উফ তিনটার দিকে কি ভীষন গরম
ন্যাকু ন্যাকু প্রেমের সময় কোথায়
বেশী করে জল খেও জন্ডিজ হলে রক্ষা নাই
বিকেল বেলাটা বড় ম্যান্দা মারা
তো কি? আমি কি তোমায় নিয়ে ভাবি?
সন্ধ্যা হলে জমে জম্পেশ আড্ডা
নুরুটা বদের হাড্ডি
রোজ রোজ জিজ্ঞেস করে
-'কি কবি উদাস কেন? প্রেমে পরেছ বুঝি?'
ধুর বন্ধুগুলো বড় বেয়াড়া
আমি চলে যাই ভায়লিন ক্লাসে
ম্যাডাম ভাল বললেই মনে হয়
ইস তোমাকে কবে শোনাব বাজিয়ে
রাতের খাবারে কুমরো চিংড়ি দেখলেই
কি? দেখলেই কি?
আমি তোমার কথা ভাবি?
কখনো নয়
ইস সারাদিন কত খাটাখাটনি
আমার ঘুম পেয়েছে
মাথায় হাত বুলিয়ে দাও দেখি!!!
আমি কিন্তু তোমার কথা ভাবি না মোটেই
ভীষন ব্যস্ত ভাববার সময় একদম নেই
যদি ভুল করে সে আসে
যদি ভুল ভালবাসে
যদি মিথ্যে প্রহশন হয় মঞ্চস্থ
তবু বলি হোক কিছু হোক

ভায়লিনের দ্বিতীয় ক্লাস।

ভায়লিনের দ্বিতীয় ক্লাস। রূদ্র নামের মহিমা রক্ষা করতে আমি নিয়ম মাফিক আধা ঘন্টা লেট। মানুষ নাকি মরেও বদলায় না। আমিও তাদের দলে। তখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি। প্রিয় একজন গনিত শিক্ষক, নাম তোফায়েল। পুরো নাম মনে নেই। আমরা অনেক সময়ই আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো সম্পর্কে যতটুকু না জানলে চলে না ততটুকুই জানি। যেমন ধরুন আপনার পাশের বেঞ্জে যে ক্লাস করে আপনি কি জানেন তার কয় ভাই বোন? আমি নিজের কথা বলতে পারি, আমি জানি না।... তো তোফায়েল স্যারের ডেঙ্গু হল। তখন ডেঙ্গু প্রথম প্রথম দেখা দিচ্ছে। ধরা পড়া মানেই কাজ হয়েছে। সকালে আমার বেঞ্জ পার্টনার ফোন দিল। বললো -চল স্যারকে দেখে আসি। আমি রাত চারটায় ঘুমিয়েছি ফোন করায় একটু বিরক্ত। তবে ফোন করার কারন শুনে একটু নরম হলাম। কিন্তু ঘুম নরম হল না আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। বন্ধুকে বললাম কাল যাব। পরের দিন দুপুর বারটায় আবার ফোন পেলাম। বন্ধুটির কন্ঠে উৎকন্ঠা-তাড়াতাড়ি স্কুলে আয়। আমার কেনর উওর এল- স্যার ৮টার দিকে মারা গেছেন। তাকে স্কুল মাঠে আনা হবে যে কোন সময়। আমি ফোন নামিয়ে রেখে থম মেরে বসে রইলাম। স্যারকে আর বলা হলনা-স্যার গনিত আমার সবচাইতে প্রিয় সাবজেক্ট আর আপনি অসম্ভব ভাল একজন মানুষ। স্যারকে স্কুলের মাঠে দেখলাম। নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ হচ্ছিল। এমন সময় বন্ধুটি মুখ কালো করে আমার পাশে এে বললো- কাল যাবি না স্যারকে দেখতে। আমার দেরি হয়ে যায় সবকিছুতেই আমার বড্ড দেরী হয়ে যায়। ও আচ্ছা ভায়লিনের দ্বিতীয় ক্লাসের কথা বলছিলাম সেটা আর একদিন বলবো। তোফায়েল স্যার আমি এখন আর অংক করি না। বসে বসে জীবনের ধাধা মেলাই। আর যখন কিছুই মেলে না তখন আপনাকে খুব মনে পরে।

প্রথম ভায়লিন ক্লাস।

প্রথম ভায়লিন ক্লাস। শিক্ষিকা নিজ গৃহে ক্লাস নেন। আমি বাসায় ঢুকে দেখলাম হেজাব পরা একটা মেয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে মেয়েটা একটু জরসর হয়ে বসল। পাশেই তার বাবা, তিনি একটু শক্ত হয়ে বসলেন। শিক্ষিকা এসে তার ছোটখাট ইন্টারভিউ নিলেন। মেয়েটি মাত্র দশম শ্রেনী উতরাল। শখের বসে শিখতে আসা, বাবা কিছুটা নারাজি। এবার আমার পালা। ম্যাডাম শুধু জিজ্ঞেস করল আমি তার ঠিকানা কোথায় পেলাম? হয়ত সিওর হতে চাইছেন আমি তাকে হাত পা বেধে... সব ডাকাতি করে নিয়ে যাব না। ইতোমধ্যে বাবাজির মুখ আরও গম্ভীর। মনেমনে হয়ত হাত কামরাচ্ছেন কেন যে মেয়েকে নিয়ে আসছেন। আমি তখন ভাবছি বাবাজি কে আরেকটু টাইট দেই। ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছেন আমি অনর্থক প্রশ্ন করছি হাসাহাসি করছি। বাবাজি কে দেখে মনে হল -আমি কই আইলাম আমার অবলা মাইয়াটারে লইয়া। আমার মনে হচ্ছিল এত ইনোসেন্ট বাচ্চা একটা মেয়ে তাও বাবা মাকে কত টেনশনে থাকতে হয়। আর সামাজিক অবস্হা দিনদিন অস্হির হয়ে যাচ্ছে। ইভটিজিং রেপ কত বাধা। বাংলাদেশে শিক্ষার কত ব্যবস্হা। মোটামুটি সব ঘরেই এখন বর্নমালা ঢুকে গেছে। তাহলে আমরা শিক্ষিত হচ্ছি না কেন? নিজেদের ভেতর মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে না কেন? তবে ক্লাস শেষে বাবাজি আর আমি বসে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম। বরফ একটু গলেছে মনে হচ্ছে। তিনি হয়ত ভাবছেন ডাকাতের মত চেহারা হলেও আমি ততটা ভয়াবহ কিছু করব না.....
পুরুষ মানুষ বড়ই খারাপ। ইহারা খাইতে দিলে বসতে চায়...

ঘুমাও তুমি

তোমার ঘুমের সাথে
বাড়ে অপেক্ষার দীর্ঘ রাত
তবু চাই ঘুমাও তুমি
তবু বলি মিলুক দু দন্ডের অবসর
চাতক দুচোখে স্বপ্নেরা বুলিয়ে দিক
ময়ূরের শান্তি পালক
আমার বড় হাসফাস লাগে
তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে
একাকীত্ব ঘিরে ধরে চারপাশ
তবু চাই প্রতি রাতে
... ছোট ছোট পরীরা হোক তোমার সন্তান
নিকোটিন পুড়ে যায়
জ্বলে যায় হাহাকার
আমার ভেতরে কেউ চিৎকার করে
সকাল ডাকে
আমি তার টুটি চেপে ধরে বলি
ও ঘুমাচ্ছে
ওকে দু দন্ড শান্তিতে ঘুমাতে দাও
ঘুমাও তুমি
আমি জেগে থাকি অনন্ত দীর্ঘ রাত
রোজ রোজ বদলে যায় চাল
ক্ষনে ক্ষনে বদলায় গুটি
ধ্যাত! আজকেই পোড়াব শতরন্জি
নৈশব্দের সুর হারিয়ে যায়
শব্দের কোলাহলে
আমি চাইছি জীবন আটকে যাক
এই মুহূর্তের ফ্রিজ শটে
এভাবেই শেষ হয় কোন কোন গল্পের উপখ্যান
শেষের সাদা পাতায় আরো কিছু লেখা যেত
থাক ওটা অলিখিতই থাক
তুমি ফিরে এসে ইচ্ছে মত রং চড়িও উপসংহারে

ভালবাসা তুমি

খুশী তুমি দুঃখ তুমি
স্বপ্ন তুমি আশা তুমি
হাজার কাজের ভিড়ে
এটুকরো অবসর তুমি
বিশ্ব জনসংখ্যায় একমাত্র মানবী তুমি
দীর্ঘ ক্লান্তিতে শান্তি তুমি
রাত্রির আধার তুমি
একাকীত্বের সঙ্গী তুমি
স্বপ্ন বোনার মিহিন সুতা
মরিচিকার পেছন ছোটা
সুখ কিংবা দুঃখ তুমি
হয়ত কার জীবন তুমি
সাকি তুমি সুরা তুমি
পান পাত্রের মাতাল তুমি
পাগলের পাগলী তুমি
পাওয়া না পাওয়ার জুয়ার টেবিল
হরতন রইতন ইস্কাপানের টেক্কা তুমি
প্যাকেটে শেষ সিগারেট তুমি
পথিকের পথ তুমি
অবিশ্রান্ত পথ চলা তুমি
ভালবাসা তুমি শেষ আশ্রয়
হয়ত কার জীবন তুমি
অপেক্ষায় রইলাম
যদি অভিধানে যুক্ত হয় নতুন শব্দাবলী
যদি তুমি খুজে পাও প্রকাশের ভাষা
চলে এস যে কোন দিন
পঙ্কতির পর পঙ্কতি মেলাতে
শব্দের পর শব্দ সাজাতে
রূদ্রের পথ চলায় তার একাকীত্বের ক্ষনিকের সঙ্গী হওয়ার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
কিছু চাওয়া বা পাওয়ার নেই। বরং যেচে যেটুকু দিয়েছেন তার জন্য ঋনী হয়ে রইলাম।
একটা অনুরোধ করব, রূদ্রের যে বন্ধ জানালা একদিন আপনার কাছে খুলে গিয়েছিল
সে জানালাটা বন্ধ রাখবেন। আমাকে ছোট করার মত মানসিকতা আপনার যে নেই সে বিষয়ে
আমার কোন দ্বিধা নেই। ভাল থাকবেন অনেক ভাল। ও আর একটা কথা কোন দিন ইচ্ছা হলে কবিতাটা প্রকাশিত হবে আশা রাখি। অপেক্ষার খাতায় আর একটা অপেক্ষা যুক্ত হল।
এ দীর্ঘ পথ যাত্রায়
কত বন্ধু কত শত্রু
কত আপন কত পর
কত আত্মীয় কত অনাত্মীয়
ভালবাসার ঠিকানাই শুধু অজানা
জানি না সে কোন পথিকের সহযাত্রী
সে পথিক হাটে কোন পথ
চল মুসাফির হয়ে চাই
তার সন্ধানে
রোজ রোজ পুড়ি
আর নিজেকে উল্টে পাল্টে দেখি
গতকালের থেকে আজকে কি আরেকটু খাটি হলাম
দূর শালা এ কেবল বাসি ছাই
এ দহনে দাগ পরে
মরচে সরে না
বড্ড ভয়
সে আমারও হয়
ভয়েরই জয় হোক
ভালবাসা চিতায় পুড়ুক
আহ! বহুদিনের প্রতিক্ষার হল অবসান
যে যাবার সে যাবে
তাতে কিছু কি থেমে যাবে
আমিই নাহয় পুড়বো ভীষন নীলে
রোজ রোজ পুড়ি
আর নিজেকে উল্টে পাল্টে দেখি
গতকালের থেকে আজকে কি আরেকটু খাটি হলাম
দূর শালা এ কেবল বাসি চাই
এ দহনে দাগ পরে
মরচে সরে না
দুঃখ দেবে বলে কেন
মিছে মিছি ভয় দেখাও
জান না দুঃখের চার দেয়ালের মাঝেই
আমার বসত বাড়ী

চিতায় জ্বলে আগুন

এস দুঃখ পোড়াই
এস সুখ পোড়াই
এস স্বপ্ন পোড়াই
এস অশ্রু পোড়াই
এস অভিমান পোড়াই
এস অভিধান পোড়াই
এস অপেক্ষা পোড়াই
এস আক্ষেপ পোড়াই
এস আপসোস পোড়াই
এস দীর্ঘশ্বাস পোড়াই
এস প্রতীজ্ঞা পোড়াই
এস আশীর্বাদ পোড়াই
ভালবাসা পুড়ে গেছে
চলে এস দেহটাকে দুজন মিলে
চিতায় জ্বালাই....

নির্ঘুম ঘুমের শেষে
ক্লান্ত শরীর সপে দেই
নিদ্রাদেবীর কোলে
ফিসফিসিয়ে সে বলে গেল
আমি এসেছিলাম

ভাসান

খ্যাপাটে বাতাস এসে বলে গেল
ঘর দোর জানালায় খিল দে
নইলে যে কোন সময় ঢুকে যাবে চোরাস্রোত
খুলে রাখিস না হৃদয়ের চৌকাঠ
হু হু করে দুঃখ ঢুকে যাবে
আমি হা হা করে হাসি
শশ্মানে যে পোড়ে
তাকেতো গঙ্গায়ই ভাসানো হয়
আমিও যদি ভাসি
তবে কার কি এসে যায়
পুরুষ বারবার হেরে যায় মাতৃত্বের কাছে। যে সন্তান অবেলায় ঘুমিয়ে পরেছিল দীর্ঘ ক্লান্তি শেষে মা তার ঠিক জানতেন তার খোকা ঘুম থেকে জেগে উঠবে ক্ষুধার্ত হয়ে। এই ভোর চারটার সময়ও ও উঠে দেখি টেবিলে ভাত দেয়া। খাচ্ছি আর ভাবছি প্রকিতি পুরুষকে মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করে তাকে নারীর কাছে হারিয়ে দিল। সব জায়গায় পুরুষের যতই রাজত্ব হোক (যদিও অবলা নারী আর অবলা নেই, আর পুরুষ রাজত্বের সীমানাও দিন দিন মোঘল সাম্রাজের মত ছোট হয়ে আসছে) মাতৃত্বের কাছে সে সবসময়ই পরাজিত। স্যালুট তোমায় নারী।
ভুলে যেতে চাও?
যাও ভুলে যাও
দেখ কতটা নিজেকে ভোলানো যায়....
দীর্ঘশ্বাস দিন দিন আরো দীর্ঘ হয়
আকাশ ছোয়ার অব্যক্ত কামনায়
আকাশ ছুয়ে মেঘ হবে
মেঘ কেদেঁ কেটে বৃষ্টি ঝরবে
তুমি বৃষ্টি ছোবে
নোনা অশ্রুতে তৃষ্ণা মেটাবে....
বৃষ্টি ঝরায় মনের অদৃশ্য আকাশ
কতদূরে যাবে বল
ঘুমের জগতে স্বপ্নের বাসা
তার অন্দর মহলে আমার বেঠকখানা
দরজায় কড়া নাড়ে অবাক ভালবাসা

যাবত জীবন কারাদণ্ড

তোর স্বপ্নগুলো  সাজাব বলে
রং চুরি করেছিলাম প্রজাপতির ডানা থেকে
তোর রঙ্গিন ঘুড়ির দুটো পাখা চাই বলে
একটা দুরন্ত ঈগলের ডানা কেটে নিয়েছিলাম
তোর জ্যোৎস্না বিলাসের কথা চিন্তা করে
চাঁদটাকে পূর্ণিমায় আটকে দিয়েছিলাম গোটা দু'মাস
তোর জন্য একটা মালা গাঁথব বলে
হাজার জোনাকির প্রাণ বধ করে ছিলাম
তুই বৃষ্টি পছন্দ করিস বলে
মেঘগুলো সব বুক পকেটে পুরেছিলাম
অনাহারে মরল অসহায় কৃষক
তোর জন্যই তো পাগলা প্রেমিকের
হাত থেকে গোলাপ ছিনিয়ে দৌড়ে পালালাম
মনে আছে পদ্ম পাতর জল জমিয়ে ছিলাম যে?
আর এতগুলো পাপ আর অপরাধের কারণে
নিষ্ঠুর আদালত রায় শোনাল ভালবাসার
যাবত জীবন কারাদণ্ড
কিন্তু পদ্ম পাতার জলগুলো যে
রয়ে গেছে এখনও আমার কাছে
জমিয়ে রেখেছি বুকের মধ্যে

ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে স্বপ্ন সাজাই
নতুন কিছু রঙ্গে
রং গুলো সব হারিয়ে গেছে
পদ্ম পাতার জলে
ইচ্ছে করে উড়ে বেড়াই
আকাশ করে তোমায়
আকাশ আজ ভীষণ কালো
ভয় দেখায় আমায়
ইচ্ছে করে সাতার কাটি
জ্যোৎস্না করে সাথী
চাদের বুকে গ্রহণ আজ
অপেক্ষাতে আছি
ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে
দৌড়ে পালাই দূরে
ভালবাসার এই কবর
কে রেখেছে খুড়ে?

মনে মনে

ভাবটা এমন দেখছ তুমি,
তাই মুচকি করে হাসছি আমি।
শুনছি তুমি বলছ কথা,
খাচ্ছ চিবিয়ে আমার মাথা।
বসেছ এসে পাশে যেন,
মুখটা এত গম্ভীর কেন?
দেখছি তুমি লিখছ কি?
ভালবাসার কথাটি?
বসে বসে শুনছ গান,
যাচ্ছে জুড়িয়ে আমার প্রাণ।
তলিয়ে আছ গভীর ঘুমে,
বুকটা আমার বালিশ করে।
সারাদিন বসে আঁকি,
হাবিজাবি কত ছবি।
রাতে যখন সবাই ঘুমায়,
কেন যেন খুব কান্না পায়।

দূরের ভালবাসা

ভাবছ তুমি যাচ্ছি দূরে
কোথা খুঁজে পাবে মোরে
কাল বেলার চায়ের কাপে
চিনি হয়ে আছি মিশে
রোজ তোমার যাবার পথে
যে মেয়েটা ফুল বিকায়
আছি মিশে তার চোখের মায়ায়
বাসায় তোমার ফেরার পথে
চেয়ে দেখ আকাশ পানে
দুরন্ত মেঘে আমায় পাবে
দমকা বাতাস বয়ে যায়
আমার কথাই কয়ে যায়
জ্যোৎস্না রাতে একলা তুমি
ভাবছ আজ কোথায় আমি
চাঁদটা আজ আলো করেছে
আমি হয়ে তোমায় ছোবে
নদীর পারে দাড়িয়ে যখন
জলে আমার ছায়া তখন
গভীর রাতের দীর্ঘশ্বাসে
আছি আমি আছি মিশে
অনেক দূরে আজ আমার কায়া
তোমর পৃথিবী জুড়ে আমার ছায়া
যখন একলা খুব মনে হবে
খুঁজে দেখ আমায় পাবে
জড়িয়ে আছি তোমায় আমি
কোমল বাহুর আলিঙ্গনে
থাকব আমি তোমায় ঘিরে
যাই না যতই দূরে
মৃত্যু আমায় করেছে ম্লান
ভালবাসা মোর চির অম্লান

মন ভুলা

মনোযোগের বড্ড অভাব টের পাই আজকাল
সবার মাঝে থেকে কখন যে হারিয়ে যাই
নিজেই বুজতে পারিনা
চোখ দুটোতে ছানি পরে গেছে কি?
তবে কেন ঝাপসা দেখি মাঝেমাঝে?
নাকি জলে ভরে যাচ্ছে যখন তখন?
বুকের বাম পাশে ব্যথাটা কি
একটা মাইনর হার্ট এ্যাটাক এর
প্রথম লক্ষণ?  নাকি ভেতরে ডুকরে কাঁদে কেউ?
গলার কাছে কেন দলা পাকিয়ে ওঠে কান্না?
বুড়ো হয়ে গেছি বলেই কি এত অবহেলা?
ঠিক বুঝতে পারি না, কত হল বয়স?
একশ সাতাশ না আরও কিছু বেশী?
নাকি তোকে বড় বেশী ভালবাসি?

বিসর্জন

সাতশ বছরের পুরনো নগরী
শুধুই ধ্বংসাবশেষ, আস্তর ওঠা
দেয়াল, খসে পড়া জানালা, চৌকাঠ
ভাঙ্গছে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে
প্রতিটি লুকনো কোণ থেকে বেরিয়ে আসে
কিছু হারান আসবাব, তুলে ধরে
ছুড়ে দেয়, ভাঙ্গনের প্রতিধ্বনি
শোনে নীরব নিষ্ঠায়
ভাঙ্গনের পর্বটাই কষ্টকর, দীর্ঘ, যন্ত্রণা দায়ক
এরপরেই শুরু হবে খোঁড়া
যদিও কুল কুল ধ্বনি আর
চোরা স্রোত শোনা যায় ইতিমধ্যেই
টের পাওয়া যায় গভীরতম নদীর অস্তিত্ব
খুরতে হবে সহস্র বছর, যতদিন না রূপালী
আলোয় ভেসে যায় চরাচর
যার অপেক্ষায় কেটে যায় শত কোটি বছর
তারপর নদী বয়ে যাবে আগমনের উষ্ণতায়
তখন দেহটা চিতায় পুড়িয়ে হবে ছাই
লাল কাপড়ে ঢেকে মটকায় ভরে
ভাসিয়ে দেবে সেই খরস্রোতায়, সাথে দুটো গন্ধরাজ
বিসর্জনের আনন্দে তারপর বয়ে চলা সারাজীবন

রক্তে মিশে যাওয়া লোহিত কণিকা

আমি দমকা বাতাস
তোকে ছুঁয়ে দিয়ে
পালিয়ে যাব
আমি পূর্ণিমায় ভরা জ্যোৎস্না
রূপালি আলোয় তোর দু'কুল ভাসিয়ে
আমাবস্যায় হারিয়ে যাব
আমি কালবৈশাখ এ কুড়িয়ে
পাওয়া শীলাখন্ড, তুই গালে
চেপে ধরতেই বাতাসে ফুরিয়ে যাব
আমি হাওয়াই মিঠাই, তুই
গালে পুরতেই আমি নাই
আমি রঙ্গিন ফানুস
তুই আকাশে ওড়াতেই ,বিন্দু হয়ে
মেঘের ওপারে চলে যাব
আমি ঘন বর্ষার জল
তোর জানালার কাঁচে ঝাঁপিয়ে পরা গন
তপ্ত সূর্য হাসলেই মিলিয়ে যাব
আমি? আমি কিছু নই
আমি কেউ নই
আমি তোর রক্তে মিশে যাওয়া
লোহিত কণিকা
ভালবাসা আমার নাম।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস

জন্ম আমার আজন্ম এক ভুল
আগমনের উল্লাস কান্নার মুহূর্তে
একদলা কাদা মুখে ঠেলে দিয়ে
পৃথিবী বলেছিল একদম চুপ
নইলে গলা টিপে ছুড়ে দেব আস্তা-কুড়ে
তার ঋণ শোধে কেটে গেছে আধা জীবন
বাস্তবতার মুখে দাড়িয়ে সব রং মুছে যায়
ফিকে হয়ে যায় জীবন
ভালবাসা আমার রঙ্গিন ফানুস
অন্তর জ্বলে যায় কাঙ্গালপনায়
ঘৃণা ধরে যায় নিজের হীনতায়
জন্ম আমার আজন্ম এক ভুল
পৃথিবীর অভ্যর্থনা নেই, নেই
উলু ধ্বনি আযান সুমধুর
নিঃশ্চুপ অবহেলা আর ক্লান্তিকর
সহানুভূতির কালো ছায়া
তুমিও তাদের-ই একজন, উষ্ণতা নেই
ঠাণ্ডা হৃদয়
আজন্ম ভেতরে জেগে ওঠা জলপ্রপাত
রুখে দাঁড়াবার ক্ষমতাহীন, প্রেমহীন
ভালবাসা বিহীন
ভিড়ে হরিয়ে যাওয়া আর দশজনের ব্যতিক্রম
নই আমি তোমার কাছে
তোমার উষ্ণতা পেলে কোমল বাহুর
আলিঙ্গনে, আমি হতে পারতাম পদ্ম
কিন্তু জন্ম আমার আজন্ম এক ভুল
পঙ্কিলতা প্রতি শতদলে ছড়িয়েছে
শিকড় নির্মম নিষ্ঠায়
তুমি ব্যতিক্রম নও, হাজার জনের মত
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস আমার দিকে চেয়ে।

ভুল প্রণয়

ভুল প্রণয়ের ভুলগুলো সব,
শুধরে নেবার প্রগার খেলায়,
প্রায়শ্চিত্ত নামক ফুলের মায়ায়;
আত্মত্যাগ আর বিসর্জনের তুমুল মেলায়
কাছে এসে পুড়ে ও পুড়িয়ে
সব, কিসের নেশায়?
ধ্বংস করে ভালবাসার কুসুম
বীজ বুনে দিয়ে প্রতিশোধের আগুন,
পতঙ্গ হয়ে সুখের আশায়
ঝাপ দিয়ে সেই গোলক ধাঁধায়;
হারিয়ে আজ অস্তিত্বের অংকুর,
বুনে চলে ধ্রুমজাল রহস্য সূতায়
আবরণে জরিয়ে তুমি, হারিয়ে
আজ নিজেকে খুঁজে ফের কিসের মায়ায়?
যে গেছে সে গেছে, আসবে না আর ঝাঁপিয়ে দু'কূল।
বর্ষা হয়ে ঝরবে না আর সুখের বানে,
অশ্রুসজল দু'চোখ মেলে খুঁজবে না আর
ভালবাসার মানে।

একটা কবিতা

রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ গুলে খেলাম
ওরা আমায় একটা শব্দও ধার
দিল না
চারুকলার করিডরে দৌড়ে দৌড়ে
আমার পায়ে ফোসকা পরে গেল
একটা ছবিও আকা হল না
পাবলিক বাসে দু'ঘণ্টা জ্যামে আটকে ছিলাম
চন্দ্রিমায় ফুসকা খাব বলে
গিয়ে দেখি সবকটা দোকান বন্ধ
ভালবাসার দিনে দস্যি প্রেমিকগুলো সবকটা
গোলাপ চুরি করে নিয়ে গেছে
আমর জন্য শুধুই কাটাগুলো
যেদিন জ্যোৎস্না সাঁতারের আয়োজন করলাম
পাগলাটে মেঘ এসে চাঁদটাকে
গিলে খেল
লোডশেডিং এ আইসক্রিম পার্লারগুলো
আজ দেড় দিন ধরে বন্ধ
কপোতকপতিরা আর ভিড় করে না সেখানে
সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও
সেই ফেরিওয়ালাকে পেলাম না
এক ঝাঁক গ্যাস বেলুন আকাশে ওড়াব বলে
গিটারের তারে সুর বাধবো বলে
এক ছড়া নতুন তার কিনেছিলাম
সেগুলোতে সব জং ধরে গেছে
তোমাকে আমার কিছুই দেয়া হল না
এই নাও একটা কবিতা দিলাম
তোমার চুড়ি আছে?
কাচেঁর চুড়ি?
তুমি হাত ভর্তি রঙ বেরঙের চুড়ি পড়ে
আমায় একটা চিঠি দেবে?
নিশাচর ঘুমিয়ে গেছে সূর্যের শত্রুতায়
রাত শেষে ভোর হল
তবু জেগে আছি কিসের মায়ায়......
তুমি ফিরে এসে খুজে নিও আমায়
 রাতভর ক্লান্ত কোন পথের ধূলোয়....
আমি আয়না দেখিনা
আমায় চোখে আর পবিত্রতা নেই
তাই তোমারদুটি চোখ খুজে ফিরি
নিজেকে পবিত্র করবো বলে...
একাকীত্ব আমাকে রাতভর জাগিয়ে রাখে
দিনভর নেয় প্রতিশোধ
আমি কবে তোর পাকা ধানে মই দিয়েছি
তবে কেন আমাকে পোড়াচ্ছিস অনুক্ষন
একাকী রাতের নির্জনতায় হাতড়ে বেড়াই শূন্যতা...আধার ছবি আকে কোন প্রিয় মুখ.....তাতে রং ছড়ায় একরাশ নিকোটিন......তোমার কাছে যাবার কথা ছিল....কিন্তু তুমি তো ঠিকানা বলনি....এখন গভীর রাত আমি হাতড়ে বেড়াই শূন্যতা.....খুব বেশী সময় নেই....ফুরিয়ে যাবে এইটুকুও বিলাসিতা.....
সহজে পাই বলেই কি
সহজে হারাই
আজ থেকে সহজ কিছু নয়
সহজকে কঠিন করে
আজীবন ধরে রাখার প্রত্যয়
বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে হঠাৎ করে আকাশে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি বেশ বড়সড় একটা চাঁদ। সমুদ্র যাত্রায় নিয়মিত চাঁদের বাহারি রূপের খুঁটিনাটির খবর রাখলেও এই ইট কাঠের নগরে ঢুকলেই আমার মধ্যে যান্ত্রিকতা প্রবেশ করে। যাই হোক বুঝলাম দু একদিন আগে পূর্ণিমা ছিল। চাঁদ সবসময় সব রূপেই সুন্দর। আজও তাই মনে হল। সাথে সাথে যে নতুন প্রশ্নটা মাথায় উকি দিও তা হচ্ছে সে কেন সুন্দর? একটাই মাত্র চাঁদ তাই? উহু উওরটা মনমত হচ্ছে না। চাঁদের ধার করা আলো সুন্দর তাই? মানতে ইচ্ছা করছে না। চাঁদের কলঙ্ক তাকে সৌন্দর্য দিয়েছে? তা কি করে হয়? তবে তো পৃথিবীর তাবৎ চোর বদমাশ সাফারি সুট পরে ঘুরে বেড়ালে বাহারি কথা বললে সুন্দর হয়ে যেত। অবশ্য এমন সুন্দরও সমাজে আছে। সময় গেলে যাদের মুখোশ খুলে যায়। অনেকটা সেই কাকের ময়ূর সাজার মত ব্যাপার আর কি।
চাঁদটা সুন্দর কেন জান? কারণ সে একা। শত সহস্র কোটি বছরের একাকীত্বের অভিশাপ চাঁদের বুকে। এমন কি নক্ষত্র গুলো পর্যন্ত এমন নিষ্ঠুর যে চাঁদের আলো যত বেশী হয় ততই তারা দূরে সরে যায় অথবা অদৃশ্য হয়ে যায়। আর প্রতিটি মানুষের বুকের অতল গহীনে বাসা বেধে আছে একই রকম শত সহস্র কোটি বছরের একাকীত্বের অভিশাপ। তাই প্রতিটি মানুষ নিজের ছায়াকে দেখে অবাক বিস্ময়ে। আর চাঁদ প্রতিটি মানুষের কাছেই সুন্দর। যেমন প্রতিটি অ-সংসারী সন্ন্যাসী। তাই ভাবছি আমিও সন্ন্যাস নেব। রুদ্রাক্ষের মালা আর চন্দনের তিলক পড়ব। মায়া কাটিয়ে মহামায়ার কোলে আশ্রয় নেব......

মেডিসিন

মা তুমি যখন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম পটাসিয়াম সিনকারা কডলিভার অয়েল সাফি আরও যা আছে আদর করে নিয়া আস আমার মুন চায় আমি কাইন্দা কই -ছাইরা দে মা কাইন্দা বাচি। এই ঔষধ যে কোন হালার পুতে বানাইছে অরে পাইলে অক্করে মাইরা লাইতাম। মা এত আদর কর কেন? আমি যখন একা একা চলে যাব তখন কে দেখবে আমাকে। ভালবাসি তোমাকে অনেক অনেক মা......

ভাগ্য রেখা

ডক্টর
কি নির্মম ভাবে ভাগ্য রেখা তোমার হৃদয় রেখাকে কেটে গেছে। আমি অবাক চোখে চেয়ে থাকি। ভাগ্য রেখা যেখানে তীর্যক ভাবে হৃদয় কে ভেদ করে গেছে তার আগের জীবন শেষ হয়ে গেছে। তারপর তোমার পূনর্জন্ম হয়েছে। কিন্তু তোমার সে উপলব্ধি নেই। তাতে কোন ক্ষতি নেই হয়ত। কিনতু সামনে ভালবাসার যে অসীম ঢেউ এগিয়ে আসছে তাতে তোমার কত কি ভেসে যাবে আমি তাই ভাবছি....
কিছু মানুষ কষ্ট দেয়। ব্যাপার না মানুষতো কষ্ট দিতেই পারে। গরু ছাগল হইলে তো আর দিত না। এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু কেউ কেউ আবার কষ্ট দিয়া, সেই কষ্টরে খুচাইয়া আবার মজা পায়। হায়রে মানুষ
নিকোটিনের সাথে নারীর অঘোষিত শত্রুতা
আর পুরুষের অনাকাঙ্খিত প্রেম......
মিথ্যা দিয়ে কিছু অর্জন করা যায় হয়ত কিন্তু তা ধরে রাখা যায় না-রুদ্র অনির্বান

তুমি আমাকে ভালবেসো না সত্যিই বলছি ভালবেসো না

প্রতিটি প্রত্যাখ্যান আমাকে দেয় নতুন জীবন
প্রতিটি ব্যর্থতায় আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠি
প্রতিটি অপেক্ষা আমাকে ক্ষুধার্তের কষ্ট শেখায়
প্রতিটি বেদনা আমাকে সন্তানহারা মায়ের পাশে দাড় করিয়ে দেয়
প্রতিটি ছলনায় আমি প্রতিদিন প্রতারিতদের দলে ঢুকে যাই
প্রতিটি নির্ঘুম রাতে আমি হয়ে উঠি অতন্দ্র প্রহরী
প্রতিটি অবহেলা আমাকে বিদ্রোহী করে তোলে
প্রতিটি দ্ব্যর্থক কথা আমাকে করে তোলে ভাষাবিদ
প্রতিটি পোড়া সিগারেট ভেতরে জ্বালায় মনুষ্যত্বের বীজ
প্রতিটি প্রেম আমাকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যায়
তুমি আমাকে ভালবেসো না সত্যিই বলছি ভালবেসো না
আমি পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে ছড়িয়ে যেতে চাই
দুর্ভিক্ষের মাঠে, সন্তান হারা মায়ের আচলে
পথ শিশুর কুড়িয়ে পাওয়া হঠাৎ হাসিতে
সীমান্তে দাড়িয়ে ভিনদেশী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ এ
আমি বিলীন হয়ে যেতে চাই দেশপ্রেমের মন্ত্রে
গ্রাম্য জনপদে বর্ণমালার হাতে খড়িতে
কৃষকের পাশে দাড়িয়ে জোতদারকে গালি দিতে
আমি উজাড় হয়ে যেতে চাই মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়ে
তুমি আমাকে ভালবেসো না সত্যিই বলছি ভালবেসো না
আমাকে ঠেলে দাও পথে বিপথে ধুলোর মাঝে
প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের দ্বারে

সাংসারিক সন্ন্যাস

সম্পর্কের শিকল কাটতে কাটতে আমি ক্লান্ত। সম্পর্ক শব্দটির অর্থ বুঝে ওঠার আগেই এই গুরু দায়িত্ব আমার উপর কেন বা কি ভাবে চাপিয়ে দেয়া হল জানি না। কিন্তু আমি অবিরাম কেটে চলেছি এ শৃঙ্খল। আজ এতগুলো বছর পর পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই সম্পর্কের বিভিন্ন নামের মরচে পরা অবয়ব। এখন সংসার নামক যে বস্তুটি আমার চোখের সামনে তাতে হাতে গোনা দু চারজন ছাড়া কেউ বাকী নেই। এ শেকলগুলো ও কাটছে, কখনো আমি, কখনো সময়। তবে ধৈর্য হা...রিয়ে ফেলছি। মনে হয় হ্যাক্স ব্লেড এ আর ধার নেই। কিন্তু ব্যাপারটা যত দ্রুত সেরে ফেলতে পারি ততই মঙ্গল। আমার জন্য নয়। সংসারের বাকী পাচঁটি প্রানীর জন্য। আমার মা ও সেটি বুঝতে পারছেন। কিন্তু মানতে পারছেন না। তাই রোজ রোজ ঝালাইয়ের কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আমি বুঝতে পারছি এ সবই অর্থহীন। আমার মধ্যে যে বৈরাগ্য ঢুকে গেছে তাকে সামাল দেবার ক্ষমতা আমার নেই। সাংসারিক সন্ন্যাস ছেড়ে এবার সত্যিকারের সন্ন্যসকে বরণ করে নেবার সময় এসে গেছে......

আজকাল জীবন যাপন

নিদারুন মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে হঠাৎ করিয়া মনে হইল ভোর হইতেছে। আমি বহু বছরের অন্ধত্ব হইতে মুক্তি পাইতে চলিয়াছি। মনে হইতে ছিল বিভিষিকাময় ঝড়ে যে বৃক্ষের শেকড় উপড়াইয়া পড়িবার জোগাড় হইয়া ছিল কেহ যেন তার কান্ড ধরিয়া দাড় করাইবার প্রানপন চেষ্টা করিতেছে। সময়ের সাথে সাথে বুঝিতে পারিলাম যে পাশে আসিয়া দাড়াইল সে ও বহু ঝড় ঝাপটা অতিক্রম করিয়া আমারই মত তীরে ভিড়িতে চাহিতেছে। মনে মনে আহ্লাদ হইল । এইবার বুঝি দুই দুঃ...খ মিলিয়া একটা কিছু রচনা হইবে। কিন্তু সময় বড় অদ্ভুত আর তাহার চাইতেও বেশী অস্হির। হঠাৎ চোখ মেলিয়া দেখি সূর্য ওঠে নাই।আমিই হয়ত উওর গোলার্ধের সর্বোচ্চ অক্ষাংশে বসিয়া আছি। এখানে সূর্যের আলো পৌছাইবার নিয়ম নাই। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমার প্রান স্যাতস্যাতে হইয়া গেছে। আর আমি বসিয়া আছি এক হাহাকার বুকে চাপিয়া ধরিয়া। আর যে পাশে আসিয়া ক্ষনিকের তরে বসিয়াছিল সে খুব সন্তপর্নে হাত ছাড়িয়া উঠিয়া গেল। কেনই বা আসিল কেন বা চলিয়া গেল বুঝিলাম না। শুধু বাতাসে ফিসফিসানি শুনিতে পাই স্যতস্যাতে জীবন ধরিয়া রাখিয়া কি লাভ। তাহার চাইতে বরং মুক্ত হইয়া যা, উওর মেরু হইতে নামিয়া আসিয়া মাটির সঙ্গে মিশিয়া যা। পরজন্ম বলিয়া যদি কিছু থাকে তো ফিরিয়া আসিস নইলে বৃক্ষ হইয়া জন্ম লাভ করিস। বৃক্ষ খুব ভালবাসিতে জানে। তুইও আশ মিটাইয়া ভালবাসিতে পারিবি। তখন হয়ত ক্ষনিকের তরে যে আসিয়াছিল সে আর ভালবাসার অভাব বোধ করিয়া ফিরিয়া যাইবে না। বরং হয়ত পাখী হইয়া তোরই বুকে কুঠির বাধিবে। বাতাসের ফিসফিসানি শুনিয়া আমার গায়ের রোম খাড়া হইয়া যায়। নিজেকে পাগল পাগল লাগে। মনে হয় একটা মানব জন্ম ভালবাসার জন্য নষ্ট করিয়া ফালাইলাম। কিন্তু সে অধিকা কি আমার আছে? বাচঁতে ইচ্ছা করে, মনে হয় বৈরাগ্য গ্রহন করি। সংসারে যখন টিকতে পারিলাম না, যাই অ-সংসারে যাইয়া দেখি। যদি সিদ্ধি মেলে। যদি মেলে তো মুক্তি পাইয়া গেলাম আর যদি না মেলে তো ফের বাতাসের সাথে কানাঘুষা করিয়া একটাকিছু সিদ্ধান্ত লইয়া লইব.......

নাবিক ও মেঘবালিকা

আধখানা ভাঙ্গা চাঁদ, ডুবে যাওয়া নক্ষত্রের রাত
পাল ছেড়া দিশেহারা বেহিসাবি নাবিক
চেয়ে দেখে অসীম শূন্যতায়
ধ্রুবতারা মুছে গেছে  আকাশের বুক থেকে
বাদুরের ডানায় ভর করা নিকষ কালো রাতে
গুনে গুনে হিসেব মেলে না
খসে গেছে কত নাম না জানা তারা
চাতকের তৃষ্ণা নিয়ে জেগে থাকা
অন্তত এক ফোটা বৃষ্টির অপেক্ষা
কাঠঠোকরার মত নির্মম নিষ্ঠায়
বোবা অনুভূতির অবিরাম ঠুকরে চলা
অপেয় নোনা জলের অথৈ সাগর
অধীর হয়ে চায় একফোঁটা পিপাসার জল
মেঘ বালিকা! ও মেঘ বালিকা!!
তুমিতো বুকে ধারণ করেছ তৃষ্ণার জল
চেয়ে দেখ কৃষাণের ফসলি মাঠ
আজ ফেটে চৌচির, কোথাও প্রাণ নেই
শুধুই শুষ্ক আরব্যরজনী
ধ্রুবতারা মুছে গেছে  আকাশের বুক থেকে
গাঙ্গচিল হারিয়েছে উড়বার শকতি
তোমার চোখে ধ্রুব তারার আলো
আঙ্গুলে সেতারের সুর
নেমে এস নীলিমার বুক থেকে
নেম এস এই মর্তের পৃথিবীতে
এস এস কৃষাণের অঝোর বৃষ্টি
বেহিসাবি নাবিকের মৎসকুমারি

আজন্ম এক অবুঝ শিশু

আমি বারি বয়স বাড়ে না
নিজেকে ভুলিয়ে রাখি
লেবু লজেন্স এর মায়ায়
খুঁজে ফিরি হারানো মার্বেল
ইনজেকশন এর ছোট কাঁচের শিশি
খেলনা গাড়ীর খুলে যাওয়া চাকা
আমি বারি বয়স বাড়ে না
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভদ্রতায় যখন
হাঁপিয়ে ওঠে প্রাণ
তখন কানামাছি খেলার ছলে
ছুঁয়ে যাই কিছু প্রিয় নাম
ঠা ঠা রোদে দাপরে বেড়াই
আদিগন্ত ফসলি মাঠ
গতি জড়তা ক্লান্তি এনে দেয়
নিমিষে হয়ে যাই কাকতাড়ুয়া
কিংবা রিক্সার পিছে ঝুলে থাকা দস্যি ছেলেটা
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া
বিশাল বাজ পাখিটার বুকের মধ্যে শুয়ে
ঘুড়ি নাটাই নিয়ে মজে যাই কাটাকটি যুদ্ধে
আজন্ম এক অবুঝ শিশুর বাস আমার ভেতরে
আমি বারি বয়স বাড়ে না

খুব ভালবেস

এলেবেলে ঠিক চলে যাবে সময়
ভেবনা হৃদয়ের ঋন নিয়ে
কিছু যদি বাকী থাকে
বল কি এসে যায়
আমরাতো মেলাতে বসিনি বার্ষিক হালখাতা
কিছু দেনা কিছু পাওনা
অন্তত ওই টুকু থাক
নিজেকে ঠকিও না
যেখানে নিয়ে যায় হৃদয়
সেখানেই খুজে নাও মুক্তির স্বাদ
আর আমি! জড় পাথর ছিলাম
আজও আছি  থাকব
যতদিন না তুমি ফিরে এসে
পাথরের বুকে ঝর্না বইয়ে দাও
যদি কোনদিন মনে হয় এসেছে সময়
ভুলে যেও ক্লান্ত ইতিহাস
সব দ্বিধা ঝেরে ফেলে যদি মন চায়
নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খুব ভালবেস

ওরা আবার শপথ নেবে স্বাধীনতার

আমি ক্লান্ত হই
অপেক্ষাদের ক্লান্তি নেই
ওরা ঠিক জেগে থাকে
ওরা রাজপথে বসে থাকে রক্ত ছড়াবে বলে
আগুন জ্বালাবে বলে
দুর্ভিক্ষের অন্ন হবে বলে
নিষ্পেষিত মানুষের চোখের জ্যোতি বাড়াবে বলে
অপেক্ষারা বসে থাকে কিশোর তরুণ হবে বলে
তার রক্তে ভালবাসার বিদ্রোহ বুনে দেবে বলে
ওরা বসে থাকে কার্ল মার্কসের জন্য
মেহেদী আলাইওয়াসসাল্লামের জন্য
ডাস্টবিন খাদ্য গুদাম হবে না বলে
মনুষ্যত্বের শিক্ষা বিকবে বলে
ওরা জেগে থাকে সীমান্তের কাঁটাতার উপড়ে দেবে বলে
ওরা শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকে
ওরা গড়ে তোলে অবৈধ অস্ত্রের গুদাম
সমাজের মুখে থুথু দেয়া গান
জেগে জেগে তালিকা গড়ে
কে কে প্রাণ দেবে পরবর্তী মিছিলে
অপেক্ষা যুগে যুগে জন্ম দেয়
তিতুমির খুদি রাম
তবু ফেলানীরা ঝুলে থাকে কাঁটাতারে
পথে পথে পরে থাকে
অভাগার টুকরো টুকরো সন্তান
বাতাসে ভাসে আজও ধর্ষিতের হাহাকার
আমি ক্লান্ত হই
অপেক্ষাদের ক্লান্তি নেই
ওরা আবারও মিছিলে মিছিলে
শ্লোগানে শ্লোগানে ছড়িয়ে দেবে
বিদ্রোহের আগুন
ওরা মায়ের আচল ছেড়ে
বেরিয়ে যাবে পথে পথে
প্রেমিকাকে আপাতত শোনাবে না আর রবীন্দ্রনাথের গান
ওরা বিদ্রোহীর কবির বিদ্রোহ হবে
শিকল পরার ছলেই ভাঙ্গবে শেকল
জোতদার আড়তদার সিন্ডিকেট
ডান বাম রাজনীতি অ-রাজনীতি
সব কিছু ধুয়ে মুছে হবে সাফ
আমি ক্লান্ত হয়ে
মেনে নিয়েছি আপোষ রফার দৈনন্দিন জীবন
আগুনে মিছিলে হত্যায় ধর্ষণে লুণ্ঠনে
চোরাবাজারী কালোবাজারি মাফিয়া সিন্ডিকেট
মায়ের আচলে টান পরলে
ভান করে থাকি না দেখে
আমার ক্লান্তি আসে তাই
মেনে চলি সাংসারিক নিরাপদ উষ্ণতা
সেদিন চলে গেছে
অপেক্ষারাও আজ ক্লান্ত
ওরা আর মেনে নেবে না
আপোষ রফার জীবন
এখন সময় ছিনিয়ে নেবার
রোজ রোজ যুদ্ধে যাবার
সৈনিকের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় প্রতিক্ষণ
যেকোনো মুহূর্তে উঠবে হুংকার
জ্বলবে দাবানল
তিরিশ লক্ষের ঋণ শোধাতে
দু লক্ষের ইজ্জত বাঁচাতে
যে কোন মুহূর্তে ওরা
আবার শপথ নেবে স্বাধীনতার

নিঃসঙ্গ নক্ষত্র

নিঃসঙ্গ নক্ষত্র অবশেষে
আশ্রয় খুঁজে নেয় কৃষ্ণগহ্বরের বুকে
সময় ফুরিয়ে গেছে ঢ়ের আগে
আকাশের বুকে চন্দ্রবিন্দুর সাক্ষী হয়ে থাকার
বৃদ্ধ পেঁচা আর মুখ তুলে তাকায় না
অবাক বিস্ময়ে
পানকৌড়ি দম্পতি তাদের মিলনের
সাক্ষী হিসেবে আর গণনা করে
না তাকে
পালকের মসৃণ উজ্জ্বলতা মুছে দিয়ে
মাছরাঙ্গা হারিয়ে গেছে সেই কবে
সূর্যাস্তের পর সে আর বসে থাকে না
নক্ষত্রের আশে
ধূর্ত নাবিক বুঝে নিয়েছে চুম্বকের দিক দর্শন ক্ষমতা
প্রয়োজন ফুরিয়েছে তাই প্রাচীন ধ্রুবতারার
দক্ষ জ্যোতির্বিদ ঘোষণা করেছেন
আগামী দু'দশ শতাব্দীতে
এ নক্ষত্রের অবস্থান মূল্যহীন
হায় নক্ষত্র তাই বুঝি আশ্রয় নিয়েছ
তুমি কৃষ্ণগহ্বরের বুকে
তবুও তো তোমার কান্না শিশির হয়ে ফোটে
সকালের ঐ সবুজ গালিচার বুকে

মন চাইছে বৃষ্টি হোক, ঝুম বৃষ্টি....

মন চাইছে বৃষ্টি হোক, ঝুম বৃষ্টি
বিশ্ব জুড়ে আলো আধারির লুকোচুরি
কলাপাতায় শুদ্ধ জলের ছলচাতুরী
চারিদিকে ব্যাঙের ডাকে গভীর প্রণয়
খুকির মতন কদম হাসে খলখলিয়ে
এক জোড়া কাক গাছের ডালে অবাক ভিজে
মাটির বুকে সোঁদা গন্ধ উপচে ওঠে
টিনের চালে রুম-ঝুমঝুম নূপুর বাজে
পেয়াজ মরিচ মুড়ি-মাখা সর্ষের ঝাঁঝে
মায়ের গায়ে আদুরে ঘাম খিচুড়ির আঁচে
বাবা যখন ভীষণ ব্যস্ত অফিসের কাজে
বোনটি আমার কাঁথা মুড়ি আলসেমিতে
বারান্দাতে পাতাবাহার হাওয়ায় দোলে
ঠিক তখনি তুমি আস ছাদের কোনে
খোলা চুল যায় ভিজে যায় দুষ্টমীতে
অবাক হয়ে দেখব তোমায় দু'চোখ ভরে
তাইতো আমার মন চাইছে
বৃষ্টি হোক, ঝুম বৃষ্টি।।

প্রবেশ নিষেধ



















আমি এক ভিন্ন পৃথিবীতে পথ চলছি
সে পৃথিবীতে সবাই আমার অতি-অপরিচিত
এখানে আমার হৃদয় ঘটিত কোন ঋণ নেই
আমার চারদিকে তুলে রাখা বুলেট প্রুফ দেয়ালের
ভেতরের দগদগে ক্ষতের হদিস তাদের জানা নেই
শামুকের খোলে বন্দী অনুভূতির
সন্ধান এখানে কেউ রাখে না
এখানে ভালবাসা দেখলে আমি দৌড়ে পালাই
কেউ সহানুভূতির বুলি আওড়ালে
আমি দাঁত মুখ খিচিয়ে তাকে ভয় দেখাই
আর তার পালিয়ে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে
হেসে উঠি পাগলা হাসি
হৃদয় বড় ঠুনকো, ওকে নিয়ে আর ছেলেখেলা নয়
তাইতো হৃদয়কে মমি করে রেখেছি
পিরামিডের খাঁচায়
ওখানে আর কারও প্রবেশাধিকার হবে না কখনো

ঘুণে পোকা













যদি খুলে দেই এ বন্ধ জানালা
একটা চাঁদ এসে যদি ধরা দেয়
স্যাঁতস্যাঁতে চার দেয়ালের মাঝে
যদি হা হা করে অট্টহাসিতে
উড়িয়ে দেই সব দুঃখবিলাস
শ্রীমতী দুঃখ সুন্দরী
তবে তুমি কোথায় যাবে?
কার হৃদয়ে বাধবে তোমার ঘর বসতি?
ঘুণে পোকা রোজ রোজ
পরিপুষ্ট করে তুলছো নিজেকে
আর যাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছ
ভেবে দেখেছ কখনো
সে কি রকম ভাবে বেঁচে আছে?

চন্দ্রাবতীর নীরবতা













বহুদিন তোমায় নিয়ে কবিতা লিখি না
যদিও তোমাকে নিয়েই প্রথম
কবিতায় হাতে খড়ি
সে বহু পুরনো কিচ্ছা-কাহিনী
তখন হিজলের বনে সবেমাত্র
মুকুল উঁকি দিয়েছে
স্রোতস্বিনী নদীটি তখনও
নয় এত যৌবনবতী
আর প্রজাপতি তখনো সবে মাত্র
গুটি পোকা
তখনও জানে না সে অনন্ত আকাশের ব্যাপ্তি
তারপর কি যে হল
এক চাঁদ যায় দুই চাঁদ যায়
সন্ধ্যা পাখীরা আর ফেরে না ঘরে
অযথা ঘুরে মরে একলা শালিক
কাশবন থমথমে, যেন  চারিদিকে
হিটলারের কারফিউ জারি
এক চাঁদ যায় দুই চাঁদ যায়
দুজনেই ভুলে যাই অ আ ক খ
স্বরলিপির ধ্বনি
চন্দ্রাবতী! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
এখন তো সবখানেই শান্তির খসড়া চুক্তি
একবার না হয় নীরবতার জানালা খুলে দিও
আল্লাহর কসম লাগে তবু দিও
মাথার দিব্যি রইল, এরপর তুমি চাইলেই
চিরতরে হব দেশান্তরি

বেদনার মন্দির



















রুদ্রাক্ষের মালা আর চন্দনের তিলক পরে
রোজ রোজ পূজারী সাজায় বেদনার মন্দির
একাকীত্বের অর্ঘে পূজা চরায়
অতীতের বেদীতে
প্রাণ ভরে শুষে নেয়
বিষণ্ণতার প্রসাদ
প্রতিদিন অতীত হয়
অতীতের আরাধনায়
ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে
কষ্টের পিরামিড
যেখানে মমি হয়ে শুয়ে থাকে
পূজারীর হাতে বলি হওয়া
তারই বর্তমান
ভবিষ্যৎ এর কাছে যা নিতান্ত মূল্যহীন

নক্ষত্রের গল্প














এক একটা মৃত নক্ষত্র
জোনাকি হয়ে নেমে আসে
শত সহস্র বছরের পুরনো রাতের আধারে
চাঁদের সঙ্গী হয়ে, নিঃসঙ্গতা আলিঙ্গন করে
নেয় এই অদ্ভুত মায়াবী আধার
ঝি ঝি পোকার সুরের মূর্ছনার সাথে
তাল মিলিয়ে বাতাস
দুলিয়ে দিয়ে যায় সোনালী ধানের শীষ
আর বাতাসে ছড়িয়ে দেয় মাদকতা
নিশাচরের ঘুম ভেঙ্গে যায়
রাতের মৌন কোলাহলে
চিলে কোঠার কার্নিশে নিজেদের
উষ্ণতা ভাগ করে নেয়
শুভ্র পায়রা দম্পতি
নিশ্চল পাথর হয়ে কাপালিক সাধুর ছদ্মবেশে
কান পেতে শুনি সেই বকবাকুম ধ্বনি
প্রেমিকার শেষ চুম্বন
একরাশ বিষ ঢেলে দিয়ে উড়ে যায়
ধোয়া হয়ে
রাতের আধারের মতই পুরনো কিছু বোধ
কাজ করে মস্তিষ্কের নিউরনে
এমন সময় একটা জোনাকি
ফিসফিসিয়ে শোনায় এন্ড্রোমিডার গল্প
কালপুরুষের তীর বিদ্ধ করেছে যার
ভালবাসার হৃদয়
আর ডেলফিনাসকে হারানোর বেদনায়
এসকরপিওর বিষে এন্ড্রোমিডার আত্মহনন
অবশেষে এন্ড্রোমিডা আর ডেলফিনাস জোনাকি
হয়ে নেমে আসে পৃথিবীর কোলে
একটা ক্ষুধার্ত নেকড়ের হঠাৎ চিৎকারে শিউরে উঠি
জোনাকির সাথে অদ্ভুত ভাবে মিলে যায়
পুরনো একটা গল্প
হাত পেতে জোনাকিকে তালু বন্ধী করতেই
আমি রূপান্তরিত হয়ে যাই
একটা জোনাকিতে
আর শত সহস্র রাত অপেক্ষায় থাকি
তোমার জোনাকিতে রূপান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায়.......

রোদ্রিতা আমার ভীষণ ইচ্ছা করে


















রোদ্রিতা আমার ভীষণ ভালবাসতে
  ইচ্ছা করে
 ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালবাসতে
  ইচ্ছা করে
 ঘুম চুরি করা লাল দুই চোখ নিয়ে
 তোমার অফিস যাবার পথে দাড়িয়ে থাকতে
  ইচ্ছা করে
 তোমার হাতে কাঁচা প্রেমের পদ্য ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে
  ইচ্ছা করা
 রোদ্রিতা তোমার কটমট প্রত্যাখ্যান চোখের সামনে
 মাথা নিচু করে বেহায়ার মত হাঁসতে
  ইচ্ছা করে
 সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে শুধু তোমাকেই দেখতে
  ইচ্ছা করে
 বুক পকেটে তোমার ছবি নিয়া শহরময় ঘুরতে
  ইচ্ছা করে
 রোদ্রিতা তোমার ঘর কন্নার ডাল ঘুটনি হতে আমার অনেক
  ইচ্ছা করে
 শাড়ি হাতে তোমার স্নান ঘরের দরজায় দাড়িয়ে থাকতে
  ইচ্ছা করে
 তুমি হাত বাড়ালে ডাকাত এর মত
 হুর-মুরিয়ে তোমার স্নান ঘরে ডুকে যেতে
  ইচ্ছা করা
 তিরটিরে কাঁপা যৌবনে তোমাকে আমূলে বিদ্ধ করতে
  ইচ্ছা করে
 রোদ্রিতা তোমার গায়ে মাতৃত্বের গন্ধ পেতে আমার অনেক
  ইচ্ছা করে
 আমার বাড়ি ফেরার পথে তোমার উদ্বিগ্ন দুটি চোখ দেখতে
  ইচ্ছা করে
 নতজানু হোয়ে তোমায় ব্যতিব্যস্ত করার জন্য ক্ষমা চাইতে
  ইচ্ছা করে
 রোদ্রিতা তোমার চোখের সামনে আমার বৃদ্ধ হতে
  ইচ্ছে করে
 আমার ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালবাসতে
  ইচ্ছা করে
 রোদ্রিতা তুমি আমার ভালবাসা হবে?

তুই তুমি আপনি























ইচ্ছে করেই বন্দী হয়ে থাকি
আপনি-র দূর্ভেদ্য দেয়ালে
বঙ্গভবনের মত নিরাপত্তা বোধ করি
আপনি-র বেষ্টনীর মধ্যে
মাঝে মাঝে এক ধাপ নীচে এসে
সিড়ির ল্যান্ডিং এ দাড়ালে
দেখা হয়ে যায় তুমি-র সাথে
আমি বড় আতঙ্কে থাকি
তুমি কি কোন ছেলে খেলা নাকি?
যত সূর্য ঢলে পরে
যত রাত মাতাল হয়
হৃদয়ের ঋন তত বাড়ে তুমি তুমি বলে
হুড়মুড় করে তুই এ নেমে গেলে
আমি বড় স্বস্তিতে থাকি
তুই এর সাথে আমি নির্দ্বিধায় ভাগ করে নিতে পারি
আধ খাওয়া সিগারেট আমার বিছানা বালিশ

শ্বেত পাথরের চাঁদ














হায় চাঁদ! শ্বেত পাথরের চাঁদ
তোমার বুকেও কালো বেদনার ছাপ!
তবুও মর্ত্যের পৃথিবী ভেসে যায়
রূপালী জোছনায়
কি করে ভুলে থাক বিষাদের নিঃশ্বাস?
রাতি নিঝুম ঘুমিয়ে গেলে একদিন
নেমে এস আমার উঠোনে
হাতে হাত রেখে
ভাগাভাগি করে নেব দুজনার দুঃখবিলাস
তোমাকে শোনাব আমার একান্ন-তম দুঃখ
কি করে পেল মাতৃত্বের স্বাদ
ইচ্ছে হলে তুমি বলতে পার
কোন মৃত নক্ষত্রের উপাখ্যান
নয়তো নিমগ্ন হয়ে আমরা শুনবো
আধারের এজ্রাস

নারী ও কবিতা


















প্রেম চাইছি না
চাইছি না অধর আর ওষ্ঠের
নুন্যতম দূরত্বের বসবাস
চাইছি না তোমার কুমারী যুগল স্তনের
উষ্ণতার ভাগ
তোমাকে শৃঙ্খলিত করতে চাইছি না
সাংসারিক অদৃশ্য শিকলে
বলছি না ধোঁয়া ওঠা ভাত
তুলে দাও আমার নৈশ ভোজে
ভালবাসি ভালবাসি ত্রাহি চিৎকারে
বিব্রত করে তুলবো না তোমার চারপাশ
চাতকের 'জল-দে' 'জল-দে'র মত
বলবো না প্রেম-দে প্রেম-দে
চাইবো না উপত্যকায় গিরিখাতের সন্ধান
তবুও আমিতো মানুষ
বল কতদিন সহ্য হয়
এ দুর্ভিক্ষের অভিশাপ
অভিধানগুলো সব দুরারোগ্য প্লেগে আক্রান্ত
যেদিকে তাকাই শুধু মৃত শব্দের লাশ
বর্ণমালা রোজ রোজ গণধর্ষনের শিকার
প্রিয়তমা তাই মাঝে মাঝে এসে
দাড়িও তোমার চৌকো গ্রিলের বারান্দায়
দেবী দুর্গার বেশে এই কবিকে দিও
নতুন কবিতার আশীর্বাদ

কবি ও কবিতা













তোমাকে আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি
বিভিন্ন এঙ্গেলে তাক করি
টেবিল ল্যাম্পের আলো
দক্ষ ফটোগ্রাফারের মত সেট করে নেই
সঠিক লেন্স, ফোকাস, এ্যাপারেচর, আই এস ও, ডি-লাইট
পোশাক শ্রমিকের নিখুঁত কারিগরিতে
বেছে নেই নির্ভুল কালার কম্বিনেশন ও থ্রেড
তোমাকে আমি তুমুল সাজাই
সারারাত জেগে
ঢাকাইয়া জামদানী, লাখনৌ লেহেঙ্গা
লেডি জিনস নয়তো ভিক্টরিয়াস সিক্রেট
অতঃপর তোমাকে তিলে তিলে অনাবৃত করি
নেশাগ্রস্ত চোখে চেটে নেই
সৃষ্টির উল্লাস
বৃষ্টি রাতে তুমি আমি ভিজি নগ্ন পায়ে
আর জোস্ন্যায় মেতে উঠি নিষিদ্ধ সঙ্গমে
আমাদের প্রতিটি মিলন দশ মাস দশ দিনের
পোয়াতি জীবন আর
মানসিক প্রসব বেদনা
আর প্রতিটি কবিতার জন্ম
এক অপার্থিব অর্গাজমের সুখ

বখাটে













আমি তোমার জন্য হতে চাই চরিত্রহীন

তোমার বাড়ী ফেরার পথে
বখাটের মত সিটি বাজিয়ে
আমি উত্তেজিত করে তুলতে চাই অলিগলি
নয়ত চৌরাস্তায় লম্পটের মত
তোমার ওষ্ঠ কামরে  রক্তাক্ত করে দিতে চাই
প্রয়োজনবোধে চৌকিদারের কাছে
মুচলেকা দেব ইভ-টিজিং এর দায়
নয়ত আনাড়ি শরাবির মত আকণ্ঠ গিলে
ভালবাসা উগড়ে দেব তোমার মেহগনি দরজায়
রাতদুপুরে সর্বহারার মত
তোমার অন্দর মহলে ঢুকে
হতে চাই তোমার ঘুমহীন স্বপ্নের সঙ্গী
নিয়মের কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে গড়তে চাই নতুন সমাজ
যেখানে আমাদের মিলন-ই একমাত্র সংবিধান
আমি তোমার জন্য হতে চাই চরিত্রহীন
সব কিছু মুছে দিয়ে আমি
নতুন করে লিখতে চাই প্রেমের অভিধান

ভালবাসার কাছাকাছি কিছু একটা
















আমরা ভুল সময়ে এসে

মুখোমুখি বসেছি এ ওয়েটিং রুমে
দুটি আলাদা ট্রেন আমাদের পৌঁছে
দেবে দুটি ভিন্ন গন্তব্যে
হয়ত কিছুদিন আগে হলে
তোমার খোপায় গুজে দেয়া যেত
একটা টকটকে লাল জবা ফুল
তোমার নীরব চাহনি থেকেই বুঝে নিয়েছি
তুমিও ভুল পৃথিবীর বাসিন্দা
তোমার চেনা অন্দরে ভুল মানুষের বসবাস
হয়ত কিছুদিন আগে হলে
আমরা পরিব্রাজকের মত একটা
নতুন অভিযাত্রায় বেরিয়ে পড়তে পারতাম
হয়ত তোমার কপালে বেমানান কাল টিপের
বিরুদ্ধচারন করে আমি বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতাম
হয়ত তুমি কাল টিপ বদলে নিতে
নির্জন দুপুরের একাকীত্বের নীলে
হয়ত কিছুদিন আগে হলে তোমার জন্যই
বুকের মধ্যে পুষে রাখতাম একদল বেয়াড়া প্রজাপতি
আমি ট্রেনের হুইশেল শুনতে পাই
আমাদের দেরি হয়ে গেছে
আমরা ভুল সময়ে এসে বসেছি মুখোমুখি
আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভুল গন্তব্যের দুটি ট্রেন

বিনিময় প্রথা

ও বাবু তোমার চোখে
ক্ষুধার্ত নেকড়ের নির্লজ্জতা কেন?
হাতে এত জোর, নখে এত ধার কেন?
ও বাবু তোমার মুখের মধ্যে এত খিদে কেন?
হা করলে আল-জিব বেয়ে লালা ঝরে!
কতদিন ধরে উপোষী তুমি?
তোমার প্রেমের ভাষায় বড় হিংস্রতা
শুধুই মাখামাখি, মারামারি, ছানাছানি
আমার আর কি? যা চাও নিয়ে নাও
কড়ি ফেলতে ভুলনা শুধু
ও বাবু দু'ঢোক মদ গিলেই
এমন কান্না জুড়ে দিলে কেন?
তুমি বড্ড বেশী ভালবাসার কাঙ্গাল
আমি কোথা থেকে দেব তোমায়
তুমি দেবে আমায় একটা চার দেয়াল?
বুনে দেবে একটা সম্পর্কের মায়া জাল
একটা উনুন, গণ্ডা গণ্ডা বাচ্চার শোরগোল
আমি রোজ তাদের কপালে কাজলের ফোটা দেব
দেখ না দুনিয়া জোড়া কেমন হিংসার নজর
দেবে না?
জানি সে দেবার ক্ষমতা তোমার নেই
                                                                      আর ভালবাসা? সে দেবার ক্ষমতা আমারও নেই
                                                                      তাই এবার মায়া কান্না ছাড়
                                                                      চাষবাস যা করার কর
                                                                      সে ভাবে খুশি লাঙ্গল চালাও
                                                                      তারপর বাপু বিদায় হও

ফেরারী



















খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখ
শূন্য বালিশ, আমি নেই পাশে
খুঁজবে না আমায় আর মিছেমিছে
রাখালের ঐ সরু মেঠো পথ ধরে
ছুটেছি তখন ভিন্ন জীবনের খোঁজে
এখানে চার দেয়ালের সংসার আছে
অহেতুক সুখী সুখী মুখ
নিজেকেই ফাঁকি দেয়া সঙ্গোপনে
যখন চারিদিকে নেমে আসে নিঝুম আধার
থেমে যায় জীবনের সব কোলাহল
কথোপকথন হয় একাকীত্বের পর্দায় চোখ রেখে
দেনা পাওনার হিসেব কষে
অহেতুক আঁকিবুঁকি সাদা কাগজে
তাই নাগরিক মঞ্চের পর্দা টেনে
ছুটে চলেছি ভিন্ন জীবনের খোজে
তুমি খুঁজে নিও সুখ চার দেয়ালের মাঝে
অথবা মুক্ত আকাশ বেছে নিও শঙ্খচিলের বেশে
অযথাই জড়ানো জীবন জটিল সমীকরণে
অবিরত খেলে যাওয়া সাজানো সংলাপে
স্পট লাইট নিভে গেলে
তুমি দেখেছো কি কোন হাসিমুখ
মেকআপের আস্তরণে?

পৃথিবী আজও তুলে দেয় খড়কুটো
সোনালী শালিকের ঠোটে
আজও আমাজন সুন্দরবন হয়ে আছে
সবচেয়ে বড় ঘর, একটাই সংসার
পুরো প্রকৃতি জুড়ে
চাঁদ আজও ভোলে নাই
জোয়ারের টান
নক্ষত্রেরাও মরে নাই
ঘুম ভেঙ্গে ঠিক ঠিক জেগে ওঠে
প্রতিটি সন্ধ্যা রাতে
ধ্রুবতারা আজও খোজে
দিশেহারা ভাঙ্গা মাস্তুলের নাবিকেরে
গায়ের বধূ যখন নিভায়ে দেয়
কেরোসিনের কুপি এক ফু'তে
জোনাকি তখনও জ্বলে কাশফুলের বুকে
নদী আজও খেলে যায় ভাঙ্গা গড়ার খেলা
পাখিরাও নীড়ে ফেরে শেষ হলে বেলা
ইহাদের ক্লান্তি নাই, আসে নাই
শত সহস্র বছরে

তুমি আমি কাঁধে তুলে নিয়েছি
এক নাগরিক বোঝা
আকাশ ছোঁয়া দালান কোঠা
আর ইস্পাতের সভ্যতা
কাঁচের দেয়ালে ঘেরা দামী রেস্তরা
কাঁচের বোতলে ভরা সুখ সুরীখানা
জীবিকার তাগিদে বেড়ে চলা পতিতা
তুমি আমি বেচি মেকি শিক্ষা
আত্মসম্মান চিন্তা চেতনা
নিজেদের বিকিয়ে কিনি নাগরিক সভ্যতা
তাই দিন শেষে ক্লান্তি এলে
নিজেকেই ফাঁকি দেয়া
ছেলে ভোলানো গান শুনে
সারারাত জেগে থাকা
আধো ঘুমে বুকভরা তৃষ্ণা নিয়ে

দূর নীহারিকা



















দূর নীহারিকার ক্ষীণ আলোর মত
জেগে আছ তুমি আমার
সমস্ত সত্তা জুড়ে
উদ্ভ্রান্ত এ ঢেউ এর সাগরে
আমি পাল তুলেছি
শুধু তোমাকেই সত্য মেনে
শত সহস্র আলোক বর্ষ দূরে তুমি
আমার চোখ পুড়ে যায় তৃষ্ণায়
আমার দিন কেটে যায়
বৃথা স্বপ্নের জাল বুনে
আমার বুকে কোকিলের নিঃসঙ্গতা
আমার বুকের মধ্যে পলাশের আগুন
আরও একটা বসন্ত চলে যায় অবেলায়
তুমি জেগে থাক দূর নীহারিকার
ক্ষীণ আলোর মত
উদ্ভ্রান্ত এ নাবিকের বুকে
আমি পাল তুলেছি
শুধু তোমাকেই সত্য মেনে
আমার চোখ পুড়ে যায় তৃষ্ণায়
আমার দিন কেটে যায়
বৃথা স্বপ্নের জাল বুনে

সন্ন্যাস নাকি স্বেচ্ছা মৃত্যু?














ঘামে ভেজা দুঃস্বপ্নের রাতে
নিশুতি পেঁচার ডাকে
জেগে ওঠে অশরীরী
বাতাসের ফিসফিসানি, অলীক জ্যোৎস্নার
ষড়যন্ত্রের হাতছানি
ঘর পালাবার তান্ত্রিক মন্ত্রে
গা ছমছমে শূন্যতার বুক থেকে
দু'চারটে নক্ষত্রের অকাল মৃত্যু বেদনা
ভেতরের সন্ন্যাসকে ডেকে তোলে
সময় হয়ে এলো বুঝি পাল তুলবার
এ ঘাটের বিকিকিনি ফুরিয়ে গেছে ঢেঁড় আগে
ফুরিয়ে গেছে কি?
পরান মাঝি ও পরান মাঝী
এবার মোহনায় চল
আজন্ম কথা ছিল মিলন হবে মহাসমুদ্রে
এবার থেমে যাক চোরাবালির টান
ক্লান্তিটুকু ঝেড়ে ফেলে, ঐ যেখানে
দিগন্ত চুমুক দিয়েছে অথৈ দরিয়ায়
পরান মাঝি! চল না ডুবে যাই ঐ শীতল গভীরতায়

ছায়া বিসর্জন















ম্লান চাঁদের আলোয় হেটে যায় নিঃসঙ্গতা
পিছনে পরে থাকে তার ছায়া
অবশেষে জেনে গেছে ফুরিয়ে যাওয়ার
আগেই হারিয়ে যাওয়া ঢেঁড় ভাল
ছায়া সঙ্গীকে তাই আজ বিদায়
অশুভ আত্মার মত ডানা ঝাপটায়
একটা কালো বাদুড়
ডানার আড়াল হয়ে যায় একাদশীর চাঁদ
চারিদিকে নেমে আসে অভিশপ্ত আধার
অশরীরী নিশাচরের ডাকে বুক ধড়ফড়িয়া ওঠে
সব বিসর্জনের পরেই মেলে মুক্তি
সুখের একটা অসুখ ছিল ভীষণ রকম
অহেতুক দাবী ছিল একটা জলপ্রপাতের মালিকানার
অন্তত চৌবাচ্চায় একটা মস্ত শালুক
আর দুটি গোল্ড ফিস
নিঃসঙ্গতা আজ হেটে যায়
তার ছায়াকে নিঃস্ব করে দিয়ে
সব কিছু বিসর্জনের পরেই মেলে মুক্তি